Friday, July 22, 2011

দ্য প্রফেট অনুবাদ-01

কাহলাল জিব্রানের দ্য প্রফেট বইটির কথা শুনেছি মো্স্তাফিজুর রহমান (মোস্তাক ভাই)এর কাছে। তাকে আবার বইটি পড়তে দিয়েছে আমার সহপাঠী বন্ধু হাসান। বইটির অনুবাদ করেছে ভারতীয় এক লেখক। যাইহোক তারপর ইন্টারনেটে বইটি খুঁজতে খুঁজতে সামহোয়ারইন ব্লগে ঢুকে পড়ি এবং পেয়ে যাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা। সামহোয়ারইন ব্লগ থেকে সম্পূর্ণ
 লেখাটি সংগ্রহ করে দিলাম। এজন্য সামহোয়ারইন ব্লগের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে উক্ত ব্লগে যেভাবে পোস্ট দেওয়া সেইভাবেই দেওয়ার চেষ্টা করলাম। ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন.....




১.
সবার প্রণীত সবার প্রণত আল্ মুস্তাফা সে নিজেই তার দিবসসন্ধ্যার ঊষাউন্মেষ, দ্বাদশবর্ষ ধরে অপেক্ষা করে আছে অর্ফালিজ নগরে তার জাহাজের প্রতীক্ষায়, তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে স্বভূম জন্মদ্বীপে তার।
এবং সেই দ্বাদশ বর্ষের নবান্নের মাস আইলুল সপ্তম দিবস তার সমাগত। নগরপ্রাচীর ছাড়িয়ে পর্ব্বতে আরোহণ করল সে দৃষ্টি প্রসারিত করল বহুদূর সমুদ্র বরাবর, আচ্ছন্ন কুয়াশায় ভেসে আসছে যেন জাহাজ কার।
হৃদয় তার রুদ্ধ আগল ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়ল আত্মহারা আনন্দে বিহঙ্গগামী হ’ল বহুদূর সেই সমুদ্রে, নৈঃশব্দে চক্ষুদয় তার মুদ্রিত করল সে প্রার্থনামগ্ন হ’ল ধ্যানস্থতার।

এবং পর্ব্বত পাদদেশে অবতরণ করল যখন সে আত্মমগ্ন বিমর্ষতায় তলিয়ে গেল যেন, অন্তরাত্মায় তার গর্জ্জে উঠল হাজারো ভাবনার কোলাহল:
এ কেমন দুঃখশোকে বিদীর্ণ হ’য়ে শান্তিতে চলে যাব আমি? না, কিছুতেই পারব না আমি এই নগর ছেড়ে চলে যেতে হৃদয়ে যে আমার ক্ষতিবক্ষত হলাহল।
কত বেদনাদীর্ণ দিবসসন্ধ্যা কেটেছে আমার এই নগরপ্রাকারের সান্ন্যিধ্যে, কত নিশিযামিনী কেটেছে আমার নিঃসঙ্গ একাকীত্বে, অননুশোচনায় কেউ কি পারে তার দুঃখবেদনা ও নিঃসঙ্গতা সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে?
কতশত স্মৃতিবিস্মৃতি ছড়িয়ে আছে এই পথ জুড়ে, কতশত নিরাবরণ শিশুসঙ্গে আজন্ম শৈশব আমার হেঁটে বেড়িয়েছে ওইসব দূর পাহাড়-পর্ব্বতে। কী করেই বা পারি আমি নির্ভার দুঃখযন্ত্রণায় সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে।
ছেড়ে চলেছি যা তা তো আমার আবরণ উন্মোচন নয়, এ তো আমার স্বহস্তে গাত্রচর্ম্ম নির্ম্মোচন
এ কি নিজের স্মৃতিবিস্মৃতি পশ্চাতে ফেলে যাওয়া আমার? আমি তো ফেলে চলেছি ক্ষুৎতৃষ্ণায় আর্ত মধুর আমার প্রার্থিত হৃদয়, এ তো আমার আত্ম-বিমোচন।
তবুও আর অপেক্ষা নয়, মুহূর্ত কালও বিলম্ব নয় আর
যে সমুদ্রসিন্ধু সবকিছুকেই নিজের গভীরে সমাহিত করে নেয় আমি আহ্বান পেয়েছি তার, আমাকে যেতেই হবে অচিরাৎ সমুদ্রযাত্রায়, আহ্বান দুর্নিবার।
প্রহর গড়িয়ে নিশান্ত হ’ল, যদি রয়েই যেতে হয় তবে হিমশীতল ষ্ফটিকে গহ্বরিত হব আমি।
ইচ্ছা হয় সঙ্গে নিয়ে যাই ইথাকার সবকিছু, হায়! কেমন করেই বা সম্ভব তা জানে বুঝি অন্তর্যামী।
ওষ্ঠের ডানায় ভর করে জিহ্বা কেমন করেই বা মুখের ভাষায় বয়ে নিয়ে যাবে তাকে, মেঘলোকের সন্ধানে সন্ধানী হতেই হবে যে একাকী তাকে
এবং একাকীত্ব সঙ্গ করেই নীড় ছেড়ে ডানা মেলতে হবে সেই একাকী ঈগলকে।

পর্ব্বতের সানুদেশে এসে দৃষ্টি প্রসারিত করল সে সমুদ্র বরাবর আবার, জাহাজ ভিড়তে চলেছে বন্দরে 
পোতশীর্ষে নৌবাহিকের দল আর তার স্বদেশবাসী, সম্মুখ সমুন্দরে।

চিৎকার করে উঠল সে তার অন্তরাত্মায়:
হে আমার আদিম মাতৃকার সন্তান সকল, জোয়ারের সওয়ার উদ্দাম উত্তাল হাওয়ায়
কতশত বার আমার শয়নে স্বপনে পাল তুলেছ, কতশত বার তোমরা ফিরে এসেছো আবার আমার জাগরণের গভীরতর স্বপ্নে, বিভোর নিদ্রালসতায়।
প্রস্তুত আমি, আকুল ব্যাকুলতা যতসব পাল তুলে আছে পবনবাতাসের প্রতীক্ষায়
এই নিস্পন্দ মলয়বাতাসে আর একটি বারের জন্য নিঃশ্বাস নেব আমি, আমি শুধু আর একটি বার পিছন ফিরে তাকাবো প্রেমার্দ্রতায়, করুণা বিগলিত জাহ্ণবী ধারায়।
তারপর তোমাদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াবো আমি, সমুদ্রযাত্রীর মধ্যে আরও একজন আমি সমুদ্রাভিলাষী যাত্রী
আর তুমি বিপুলা বারিধি অকূল পাথার আমার নিদ্রাঘাত জননী ধরিত্রী।
তুমিই সকল স্রোতোস্বিনী ঝর্ণার শান্তিস্বস্তি ওজস্বিনী
এই স্রোতোস্বিনী আরও একবার কোন বাঁকে মোড় নেবে, আরও একবার মর্ম্মরিত হবে বনবীথি তেজস্বিনী
তৎণাৎই তোমার সামীপ্য লাভ করব আমি যেন নির্বাধ এক পতনবিন্দু অবাধ অসীম মহাসিন্ধু সাগরে।
যেতে যেতে লক্ষ্য করল সে নারীপুরুষের দল সব ছুটে আসছে দূরদূরান্ত থেকে ত্রস্তপদে নগরপ্রাকারের দিকে তাদের শস্যক্ষেত্র তাদের দ্রাক্ষাবাগিচা ছেড়ে
শুনতে পেল সে তারা তার নাম ধরে আবাহন করছে, দিগ্বিদিগ জুড়ে তারা তার জাহাজ আগমনের বার্তা সকলকে বিদিত করছে সোচ্চারে।
এবং স্বগোতোক্তিতে বলল সে নীরবে:
এই বিচ্ছেদের দিন কখনও কি মহাসম্মেলনের দিন হবে?
এই সায়াহ্ণবেলা আমার সত্যই কখনও কি প্রত্যুষের কিরণে কিরণিত হবে?
শস্যক্ষেত্র ছেড়ে লাঙ্গল ফেলে ছুটে এসেছে যে তাকে কী দিয়ে যাব আমি?
পেষাইযন্ত্র থামিয়ে দ্রাক্ষাক্ষেত ছেড়ে ছুটে এসেছে যে প্রতিদানে তাকেই বা কী দিয়ে যাব আমি?
হৃদয়বৃক্ষ কি আমার আনত হতে পারে না ফলভারে যে তাদের জন্য ফল ঝড়িয়ে দেব অকাতরে?
যা কিছু ইচ্ছা অভিলাষ আমার ফল্গুধারার মত দিতে পারে না কি তাদের শূন্য পেয়ালা ভরে অকাতরে?
আমি কি সেই বাদ্যবীণা গুঞ্জিত হব সেই সর্ব্বশক্তিমানের হাতের ছোঁয়ায়, না কি আমি সেই সুরবাঁশী যাতে রণিত হবে তাঁর শ্বাসবায়ু?
পরম নৈঃশব্দ খুঁজে ফিরে নৈঃশব্দের আশ্চর্য্য ঐশ্বর্য্য লাভ করেছি আমি, পরম বিশ্বাসে বিলিয়ে দিয়ে যাব কি আমি সেই পরম পরমায়ু?
এই যদি ফসল তোলার দিন হয় আমার তবে কিভাবেই বা জানব আমি কোন সেই বিস্মৃত ঋতুতে বীজ ছড়িয়েছি আমি কোন সেই জমিতে?
এই যদি লন্ঠন তুলে ধরার মুহূর্ত হয় আমার তবে তার সেই প্রজ্জ্বলিত শিখা তো আমার নয় কোন মতে
আমি তুলে ধরব প্রগাঢ় অন্ধকার সেই শূন্য লন্ঠন
যাঁর হস্তে রাত্রির অভিভাবকত্ব সমর্পিত তিনিই তাতে জ্বালানী তেলে আলোক সংলাপ করবেন, অন্ধকারের অনবগুন্ঠন।



সূত্র:দরবেশ,সামহোয়ারইনব্লগ.কম

No comments:

Post a Comment