Friday, July 22, 2011

দ্য প্রফেট অনুবাদ-09

১১
অতঃপর নগরের বিচারপতি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি আমাদের অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে কিছু বল
জবাবে সে বলল :

তোমাদের সদাত্মা যখন চকিত বাতাসে বেপথুমান হ’য়ে পড়ে
একাকী অরক্ষিত তোমরা তখন অন্যের উপর অনাচার করে বস, আদপে সেই অনাচার তোমাদের নিজেদেরই উপর এসে পড়ে


এবং সংঘটিত সেই অনাচারের প্রায়শ্চিত্তে সাধকপুরুষদের দুয়ারে করাঘাত করেও তোমরা সাড়া পাও না সেই দ্বারে।
তোমাদের ঈশ্বরসত্তা সমুদ্রের মত গভীর গম্ভীর
অনাবিল পবিত্র তা সতত সুনিবিড়
বিনা পক্ষপুটে মেঘবাতাসে উড্ডীয়মান
প্রোজ্জ্বল সূর্য্যের মতই তোমাদের ঈশ্বরসত্তা দীপ্যমান
তা সে গন্ধমুষিকের পথ জানে না বা বিবর সর্পের অন্বেষণে ঢুঁড়ে বেড়ায় না।
কিন্তু তোমাদের ঈশ্বরসত্তার বাস শুধু তোমাদের মনুষ্যসত্তার অন্তঃপুরেই না
তোমাদের অনেকখানিই এখনও মানুষ, আবার অনেকখানি এখনও মানুষ না
সেই মানুষ যেন অবয়বহীন বামন নিদ্রালসতায় হেঁটে বেড়ায় কুয়াশায়, অন্বেষণ করে সুপ্তি থেকে জাগৃতির দিশা
এখন বলি তবে তোমাদের অন্তঃপুরের সেই মানুষটার দশা
তোমাদের ঈশ্বরসত্তা নয় বা নয় সে কুয়াশায়িত বামন সেই সে মানুষ যে জানে অপরাধ কী এবং অপরাধের শাস্তিই বা কী, কীই বা তার মিমাংসা।

আমি তোমাদের অনেক বলতে শুনেছি, যে অন্যায় করে সে তোমাদের কেউ নয়, সে যেন অন্য কেউ তোমাদের জগতে অনাহূত অভ্যাগত
আমি বলি, কোন ধর্ম্মাত্মা বা সাধুপুরুষরাও ঊর্ধ্বতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না, তারা সবাই-ই তোমাদের সবার অংশতঃ
যেমন কোন দুর্ব্বল দুষ্টও তোমাদের নীচতার নীচে অধঃপতিত হ’তে পারে না
এবং সমগ্র বৃক্ষের অজ্ঞাতে একটি পত্রপল্লবও হলুদ বিবর্ণ হ’য়ে যেতে পারে না
তেমনই কোন অন্যাযকারী তোমাদের সবার গুপ্ত বাসনা ভিন্ন কোন অন্যায়সাধন করতে পারে না
কেন না তোমরা একই শোভাযাত্রায় শামিল হ’য়ে হেঁটে চল তোমাদের ঈশ্বরসত্তার অভিমুখে।
তোমরাই পথ তোমরাই পথিক সেই অভিমুখে।
যখন তোমাদের কেউ ভূপতিত হয় সে ভূপতিত হয় তোমরা কেউ পিছিয়ে পড়লে
সেই তো দুস্তর বন্ধুর পথের ঢ্যালা, সতর্ক হও তোমরা কেউ পিছিয়ে পড়লে
আর সে ভূপতিত হয় এগিয়ে যাওয়া তাদের কারণেও, তারা ক্ষিপ্র ও নিশ্চিতপদগামী
অথচ পথের ঢ্যালাটিকে সড়িয়ে দিতে হয় না সে উদ্যোগী উদ্যমী।

এসব কথায় যদি দুনিয়ার ভারে ব্যথাহত হয় তোমাদের হৃদয়, হায়:
নিহত এড়িয়ে যেতে পারে কি তার নিধনের দায়
লুন্ঠনের দায় থেকে লুন্ঠিতও মুক্ত নয়
সদাচারীও দুষ্কৃতির অপরাধের দায়ে কলুষমুক্ত নয়
এবং দুর্বৃত্তের দুর্বৃত্তি থেকে কোন অপাপবিদ্ধও নিষ্পাপ নিষ্কলুষ নয়।
হ্যাঁ, অন্যায় করে যে অধিকন্তু সে অন্যায়ের শিকার হ’য়ে থাকে
এবং এহ বাহ্য অভিযুক্ত যে নিরপরাধ আর নির্দোষীদের বোঝা বইতে হয় তাকে
ন্যায় অন্যায় আর ভালো মন্দের বিচার তোমরা করবে কোন ফারাকে;
সূর্য্যের সামনে উভয়েই গলাগলি করে দাঁড়িয়ে থাকে, কৃষ্ণ ও শুভ্র তন্তুর বয়নবুনট যেন
কৃষ্ণ সূত্র ছিন্ন হ’লে তন্তুবায় যাচাই করে না শুধু তার বস্ত্রবয়ন, যাচাই করে তার তাঁতযন্ত্রকেও হেন।
তোমাদের কেউ যদি কোন বিশ্বাসঘাতিনীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়
তবে সে যেন তার পতিপবিত্রর হৃদয়কেও তুলাদণ্ডে চড়ায় আর তাকে আত্মার মাপকাঠিতে মাপ করায়
তোমাদের কেউ যদি অপরাধকারীকে কষাঘাত করে তবে সে যেন অপরাধকৃতের হৃদয়াত্মাকেও যাচাই করে
এবং তোমাদের কেউ যদি ধর্ম্ম ও সদাচারের নামে দণ্ডবিধান করে ও বিষবৃক্ষে কুঠরাঘাত করে, তবে সে যেন সবকিছু তার সমূলে নিরীক্ষণ করে
এবং তবেই সে সদ্ ও অসদের মূল খুঁজে পাবে এবং সে দেখতে পাবে ফল ও নিষ্ফল সবকিছুই ধরিত্রীমাতার পরম হৃদয়ে জড়িয়ে আছে জড়াজড়ি করে।
আর তোমরা যারা ন্যায়পরায়ণ তারাই শুধু বিচার বিধান করবে
যেজন কথায় সৎ সদাচারী অথচ কর্ম্মে দুরাচারী তস্কর তোমরা তার কী দণ্ড বিধান করবে?
তেমরা কী দন্ড দেবে তাকে যেজন শরীরকে নিধন করছে অথচ আত্মায় নিহত হচ্ছে প্রতি নয়ত?
এবং কী নালিশ দায়ের করবে তার আচরণে যেজন প্রবঞ্চক উৎপীড়ক সত্য সতত
অথচ নিজেই সে লাঞ্ছিত উৎপীড়িত গর্হিত সতত?

এবং কী দণ্ড দেবে তাদের যাদের অনুশোচনা তাদের কৃতকর্ম্মের চেয়েও গুরুতর?
অনুশোচনা কি সুবিচার নয়, নয় কি তোমাদের আইনের বিহিত বিধানের চেয়েও মহোত্তর?
তথাপি তোমরা নিরপরাধীর অনুশোচনা জ্ঞাপন করতে পারো না, অপরাধীর হৃদয় হ’তে তা মন্থন করতেও পারো না
অনাহূত সেই অনুশোচনা নিশিযামিনীতে মানুষকে জাগিয়ে দিয়ে যায়, মানুষ জেগে উঠে কি আপন মুকুরে নিজেদের ছায়া চেয়ে দেখে না?
এবং তোমরা যারা বিচারবোধে প্রাজ্ঞ তারা কী করেই বা ন্যায় বিচার করবে যদি না দিগি¦দিগ আলোয় সবকিছুকেই সযত্নে যাচাই কর?
একমাত্র তখনই তোমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে যখন দেখবে সটান মেরুদণ্ড ও ন্যুব্জ দেহকাণ্ড সে একই ব্যক্তি যে রাত্রিকালের বামনসত্তা ও দিবসকালের ঈশ্বরসত্তার গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়ে থাকে এমনই দস্তুর এক নর।
এবং তোমরা বিদিত থেকো যে দেবালয়ের পরম ভিত্তিস্তম্ভর তার অবম ভিত্তিভূমিকে উঁচিয়ে যেতে পারে না কখনও এমনতর।


সূত্র:দরবেশ,সামহোয়ারইনব্লগ.কম

No comments:

Post a Comment